তিলোত্তমা , তুমি সাধারণ হয়েও
অসাধারন আমার কাছে।
তুমি সাদামাটা, ঠিক আমি যেমনটা আমি চেয়েছিলাম। এতদিন যাকে খুঁজে চলেছি,
সেই শ্যামাঙ্গিণী, মনহরিনী
তুমি , তুমি তিলোত্তমা তুমি।
সেই আমাদের প্রথম দেখা , স্বল্প আলাপ।
জানো আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম যখন
তুমি বললে , বই হল তোমার অবসরের বন্ধু।
অপ্রস্তুত আমি, নিজেকে প্রকৃতিস্থ করতে
একটু সময় লেগে গেল, কয়েক সেকেন্ড,
তবুও যেন কয়েক ঘন্টার সমান।
অবাক করা এক আনন্দ,
অমূল্য কোনও কিছু লাভের আনন্দ।
এই বর্তমান সময়ে , সবাই যখন স্মার্টফোন এ
মুখ গুঁজে পড়ে থাকে।
তখন তোমার চোখ বইয়ের পাতায় আটকে
শব্দগুলো স্বপ্ন আঁকে মনে।
সবাই যখন রঙিন পর্দায় একঘেয়েমি সিরিয়ালে ব্যাস্ত
তুমি তখন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকান্তের কাল্পনিক চরিত্রে ডুবে
কিংবা হয়তো সত্যজিত রায়ের 'ফেলুদা'য়,
কোনও নতুন সত্য উদঘাটনে ব্যস্ত।
সারাদিনের ক্লান্তি তোমার মুখের হাসিতে এক নিমেষে উধাও
সারাদিনের অবসরে পড়া গল্প কিংবা উপন্যাসের
এক গুচ্ছ শব্দ কথা শুনতে শুনতে
আমিও হারিয়ে যেতাম।
এক অজানা স্বপ্ন রাজ্যে,
কত রাত যে এভাবেই কেটে গেছে
ঘুম নেই, শুধু আগ্রহ আছে , শোনার,
আর তোমার শোনানোর।
সত্যি আমি বড়ই ভাগ্যবান ।
তোমায় পেয়েছিলাম স্ত্রী রূপে।
অর্ধাঙ্গিনী , না , আমার সবটা জুড়ে তুমি।
আজ ভাবতে বড় কষ্ট হয়
তুমি নেই , সেই শরতের
বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যায় ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এর
চিতাবহ্নিমান এর চুয়ান্ন তম পাতা পড়তে পড়তে–।
মুখে তবুও সরল হাসি,
চোখে অপূর্ব দীপ্তি।
বইয়ে ঠাসা আলমারিটা আজ বড্ড একা,
বইয়ের পাতায় ধুলোর আস্তরণ জমেছে।
শুধু আমার মনের নদী খরস্রোতা
তোমার ভাবনায়, ভালোবাসায়।
তোমার বাগানে ফুল ফোটে
কিন্তু সে ফুলে তেমন সৌন্দর্য নেই,
নেই তেমন মিষ্টি সুবাস।
তিলোত্তমা , বলতে পার এ কেমন কারাবাস?
শৃঙ্খল মুক্ত , তবুও বন্দি , এ কোন অদৃশ্য বাঁধন?
প্রতিনিয়ত জর্জরিত হচ্ছে হৃদয়।
এক গভীর শূন্যতা ।
হাহাকার , কাল্পনিক নয়।
শুধু তোমার গড়ে দেওয়া সেই অভ্যাসে বেঁচে আছি।
স্বপ্ন দেখার অভ্যাস।
প্রথম জীবনের স্মৃতিগুলো নিয়ে স্বপ্ন সাজাই,
অগোছালো মনের তবু বড় ব্যস্ততা
শেষটা দেখার আগ্রহ প্রবল,
চতুরতায় আমি ঘুমিয়ে যাই ,
শেষটা তাকে দেখতে দিই না।
আবার স্নিগ্ধ সকালের সূচনায়
তোমায় খুঁজে পাই ,
শরতের শিউলি ফুলে
গ্রীষ্মের রোদ্দুরে
বরষার ভরসায়
আর , শীতের শুভ্র কুয়াশায়।
0 Comments