আজকেও পৃথিবী ছাড়তে চাই | Bengali social story


গল্পো : "আমি জানি, প্রত্যুষ দা"
কলমে:  দিব্যেন্দু সরকার ( ছোট গল্প ) 

উৎসব সংখ্যার জন্য।

                          (১)

"রিসার্চ পেপারের দিকে অনেকক্ষন তাঁকিয়েই আছি  ট্রেনে উঠবার পর থেকে। কেয়েক দিন ধরে আর মন বসছেনা পড়তে।
শুধু পড়তে না,কিছুতেই আর মন থাকেনা। ছোটোবেলা থেকে পড়ার প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো, পড়ে সেটা নেশার মতো তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
বাড়ী রায়গঞ্জ ছেড়েছি অনেক তাড়াতাড়ি। তারপর শিলিগুড়ি-পুনে-আবার শিলিগুড়ি। 
একটা লম্বা সময় শিলিগুড়িতে "ইন্টিটিউট অফ টেকনোলজি"-তে প্রফেসর হয়ে চাকরি। তারপর বিয়ে। তখন ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়িতে রোজ যাতায়াত চাকরির জন্যে।  কলেজের পলিটিক্স টা যদি অসঝ্য না হয়ে উঠতো তবে হয়তো সেখানেই  নদী জলপ্রপাতের মতো পড়ে স্থির হয়ে যেতো,কিন্তু নদী কিছুতেই থামবে না,সে চলতে চায়।
আবার একটা লড়াই। ত্রিপুরা এন-আই-টি -তে, পি-এইচ-ডি-করতে গিয়ে অনেকগুলো রাজ্য ছুটতে হয়েছে।
শুধু ছুটে গেছি। দৌড়ে  গেছি। লম্বা এক দৌড়। 
আর কি বলবো প্রত্যুষ দা ? অনন্যা এক দীর্ঘশ্বাসে প্রত্যুষ কে ফোনে জানালো।"
--তাহলে কবে যাচ্ছ?
অনন্যা অবাক হওয়া কণ্ঠে বলল,"কোথায়?"।
--ওই যে সব সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাও বলো। ইচ্ছে নেই আর?
অনন্যা হাসলো। না- সত্যি পৃথিবী ছেড়ে যাবো প্রত্যুষ দা। এ ইচ্ছে চলে গেলে অনেকদিন আগেই চলে যেতো। ছেড়ে যাবো।
-- তোমার স্বামী ইসলামপুর কলেজর ইতিহাসের  প্রফেসর। তুমি ইঞ্জিনিয়ার, বাড়িতে দায়িত্ব কম, তোমার ছেড়ে যেতে ইচ্ছে কেনো? আমি আমার অগাধ অভিজ্ঞতা দিয়েও বুঝতে পারবোনা।
তবে একটা হেল্প করতে পারবো।
অনন্যা,অক্ষেয়ালি সুরে বললো- কি হেল্প?
--পৃথিবী ছাড়ার সময় আমি থাকবো।
অনন্যা হেসে উঠলো। এমন ভাবে হাসলো যেনো হাসতে চাইছিলো। হাসতে-হাসতেই বললো,"ফোন রাখি প্রত্যুষ দা।"

প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে ভাগ্য জুড়ে থাকে সকলে ধরে নেয়, কিন্তু মেয়েদের বেলায় ভাগ্য-কে জুড়ে থাকতে হয় অনেক কিছুর সাথে। ভালো স্বামী পাওয়াটা একটা ভাগ্য, যেনো খারাপটাই স্বাভাবিক ছিলো, ভালো বাড়ী, ভালো জায়গা, আরও কতো ভালো-র ভাগ্য থাকলে একটি মেয়ে পৃথিবীতে কাটিয়ে যেতে পারে।
কথাটা ভেবে অনন্যা হাসলো। কিছু ইচ্ছে আজকাল করেনা বলেই কি হাসি বেশি পাচ্ছে অনন্যার? এটা-কী তাচ্ছিল্যের হাসি। তাচ্ছিল্য কিসের ওপরে?
কোনো কিছুতে খামতি করেনি অনন্যা। স্বামী প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল শ্বশুর মশাইয়ের বাবা, রাজ্যস্তরে সমাদৃত পরিবারের বউ। 
এ পরিবারে থেকে অনন্যার পি-এইচ-ডি- না করলেও হতো, কিন্তু নিজের বাবার চোখ  যে  তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অনন্যাকে। বাবার সেই চোখ ঘুমোতে দেয়না, ঘুমোতে-জেগে বাবার সেই ঘোলা চোখ দেখতে পায় অনন্যা। 

বাবা রায়গঞ্জের একটি প্রাইমারি সস্কুলের  শিক্ষক ছিলেন, বছর পাঁচ হয়েছে অবসর-প্রাপ্তির । সম্মানের চাকরি হলেও  বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে আসা একগাদা পেট ভরানোর জন্যে কারোর কাছেই যথেষ্ট হয়ে ওঠেনি সেই সম্মানের চাকরি। জ্যেঠু,কাকুদের নির্লজ্জতার ব্যাপারে না ভাবলেও যখন মনে পড়ে বাবাকে একার কাঁধে সবাইকে নিয়ে বৃহৎ সংসার টানার কাহিনী তখন যে স্যাক্রিফাইস এর রক্ত ঘাম হয়ে পড়েছিলো- সেই ঘাম, রক্তই তাড়িয়ে নিয়ে যায় অনন্যাকে।
বাবা স্বপ্ন দেখে গেছে ঘোলা চোখে। না খেয়ে দৌঁড়ে গেছে।
বোন জিনিয়া কেও স্যাক্রিফাইস কম করতে হয়নি। যদিও বোন পড়াশুনায় ওতো ভালো ছিলো না, কিন্তু খারাপ কি ছিলো? খারাপও ছিলো না, আরও একটু বোন পেতে পারতো, কিন্তু অনন্যা যেটা পারতো সেটা সবার কাছে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিল। 
তাই অনন্যার জীবনে অবকাশ নেই। স্থির হতে পারেনা। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হতে-হতেই বাড়ির হাল ধরে নিয়েছিলো, তারপর থেকে নিঙড়ে গেছে নিজেকে।
রক্ত ঝরিয়েছে। সেই রক্তের ঝর্ণা আনন্দ দেয় অনন্যাকে।
অনন্যার জীবন- বাবা, মা, আর বোনের জন্য।
ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রেখে দেওয়ার জন্যে।
অনন্যার কাছে কি যেন একটা প্রতিদান আছে জীবনের কাছে।

                                   (২)


প্রত্যুষ আর অনন্যার কথা যেভাবে একটু বেড়েছিলো সেটা মনে পড়ছিলো প্রত্যুষের।
পরিচয় মাত্র ফেসবুক থেকে। অনন্যাকে বুঝতে শুরু করলো যেদিন ত্রিপুরা থেকে পৌঁছলো অনন্যা শিলিগুড়িতে।
ট্রেন-এ আসার সময় নিজের জীবনের কিছুটা ইতহাস ফোনে তুলে ধরেছিলো।


হ্যালো-হ্যালো-প্রত্যুষ এর আগেও অনন্যাকে ফোনে ধারার চেষ্টা করেছে, এখন সকাল নয়টা বাজে, ট্রেন ঠিক সময় পৌঁছে গেছে  শিলিগুড়ি স্টেশনে, একটু চিন্তা করছিলো  তাই।
আবার ফোন করতে যাবে এমন সময় ফোন আসলো, প্রত্যুষ ফোনটা ধরলো, "চিনে ঠিক মতো নামতে পেরেছো?"
--মানে, আমার জায়গা ছিল একসময়, আমি চিনবোনা,বলে হাসলো অনন্যা।
প্রত্যুষ একটু হেসে,"চোখ ছোটো তাই ভাবলাম যদি দেখতে না পাও"।
অনন্যা," আপনি কোথায়"? আর আমার এ চোখে অনেক কিছু ধরা পরে যা অনেকের বড় চোখে ধরা পড়েনা। 

প্রত্যুষ," আমি সকালে হসপিটালে চলে এসেছি, এখন হসপিটালেই আছি।
অনন্যা, "থ্যাংক ইউ, আমি পৌঁছচ্ছি।"
দু-দিন হলো অনন্যার শ্বশুর মশাই হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। প্রত্যুষ আজকে এসেছে হসপিটালে। সে অনন্যার বন্ধু মাত্র, তাও  একটা সোশ্যাল সাইট এর হাত  ধরে পরিচয় হয়েছিলো, কাজেই অনন্যার স্বামীর সাথে  এখনো তেমন আলাপ-পরিচয় নেই যে কোনো কাজ নিয়ে হাসপাতালে দৌড়োদৌড়ি করবে। তবে অনন্যার স্বামীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে রেখেছে।
অনন্যার স্বামী ভীষণ ভাবে ভদ্রলোক। 
প্রত্যুষ কার্যত একাই হাসপাতালে ঢোকার মুখে হাটাহাটি করছে, অবশ্য অনন্যার স্বামী ছাড়া আর কাউকে ওঁদের তরফ থেকে চোখেও পড়েনি প্রত্যুষের। ইসলামপুর আর শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে দূরত্ব বাস-এ মাত্র ঘন্টা দেড়েক, কাজেই প্রত্যুষ আশা করেছিল আত্মীয় স্বজনের স্বাভাবিক একটা ভিড় হাসপাতালে কিন্তু অনন্যার স্বামীকে মূলত একাই দেখছিলো প্রত্যুষ।
এরকমই সাতপাঁচ ভাবছিলো হঠাৎ প্রত্যুষ দেখলো অনন্যা ট্যাক্সি থেকে নামছে।
প্রত্যুষ এগিয়ে গেলো।
অনন্যা সহজাত একটু হাসি দিয়ে আসছি বলে ছুটে ঢুকে গেলো হাসপাতালের ভেতরে।
প্রত্যুষ-ও ভাবলো এবার ভেতরে বড়ো প্যাসেজ জুড়ে বসার জায়গায় গিয়ে একটু বসে, তাঁর-ও আসা অনেকক্ষন হয়েছে, পা একটু ব্যথা হচ্ছে।


প্রত্যুষ খেয়াল করছে অনন্যা আসার পড়ে থেকেই শশুর বাড়ীর লোক ভীড় করছে। আবহাওয়া কেমন বদলে যাচ্ছিলো। আস্তে-আস্তে  অনেকেই এসেছেন  এবং সবাই বেশ গম্ভীর মুখে দায়িত্ব নিচ্ছেন ।
প্রত্যুষ অনেকের কাছেই শুনছে যে তাঁরা আগের দু-দিন আসতে পারেননি, আজকেই আসতে পেরেছেন। 
অনন্যা ডাক্তার বাবুদের কাছে যাতায়াত করছে, আবার মাঝেমধ্যে শাশুড়ি-মা'কেও দেখে যাচ্ছে।
আসা যাওয়ার সময় প্রত্যুষকেও যথাযতো খবর দিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালে তিনটে ব্যাপার এসে পড়ে, প্রথম চিকিৎসা কেমন হচ্ছে, চিকিৎসার  জন্যে কি কি প্রয়োজন তা দেখা, দ্বিতীয় হলো বাড়ি র সঙ্গে হাসপাতালের যোগাযোগ রক্ষা করা। যেমন বাড়ী থেকে কি আনতে হবে, বা কিছু পাঠাতে হলে, তৃতীয়ত হলো, লোকবল রক্ষা করা।
অল্প একটু সময়ের মধ্যে তিনটে ব্যাপারে অনন্যা সামলে নিয়েছে। আত্মীয়রা বেশ নিশ্চিন্ত সেই কারণে।
অনন্যার শাশুড়ি-মা' এই কারণেই  শিলিগুড়িতে বোনের বাড়িতে উঠলেও গত দু-দিন হাসপাতালে আসতে পারেনি। আজকে অনন্যা আসায় উনি এসেছেন। উনি একটা ব্যাপারে অন্য দিনের থেকে একটু ভালো কারণ উনার স্বামীর খোঁজ উপস্থিত থেকেই নিতে পারছেন।
প্রত্যুষ অবাক হয়ে দেখছে মেয়েদের শক্তি-কে অবহেলা করার চেষ্টা  যে সেও করেনি তা নয় কিন্তু  যখন কোনো পরিস্থিতি আসে তখন সেই শক্তিকে মানতেই হয়।

প্রত্যুষ জানতো, অনন্যার শ্বশুড় বাড়ীর পরিচয়- সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বত্র স্তরে, ইসলামপুর  শহরে চেনেনা এমন লোক হবে না। তাই সর্বস্তর থেকেই লোকের ভীড় হবে এটা আশা করেছিলো, কিন্তু সেটা যে আজকে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছে প্রত্যুষ।
আজকে অন্য কিছু নিয়ে অনন্যার স্বামী প্রহল্লাদ সেন-কে ভাবতে হচ্ছেনা জন্যে বাবার চিকিৎসা নিয়ে অনেক বেশি করে ভাবতে পারছেন।
অবশ্য সেটা যে শুধু মাত্র আজকেই না, এই সুবিধেটা যে প্রহল্লাদ বাবুর  অধিকারে দাঁড়িয়েছে সেটা অনন্যার আসার পরে ভালো করেই প্রত্যুষ বুঝতে পেরেছে।



এরপর আরও আট দিন অনন্যার শ্বশুড় মশাই লড়াই করেছিলেন। সেটা স্বাভাবিক ছিলো কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামীর  রক্ত ওনার শরীরে শেষ দিন পর্যন্ত লড়াইকে জীবিতো রেখেছিলো।
যেদিন সব লড়াই শেষ হলো সেদিন আবার প্রত্যুষ হাসপাতালে গিয়েছিলো দেখতে।
এই কয়েকদিন ফোনে তিনবেলা খবর নিতো।
অনন্যা যে কাউকে কিছু করতে দেবে না সেটা নতুন করে ভাবার দরকার ছিলোনা। আরো একটু অবাক করতে পারলো যখন প্রত্যুষ শেষ কাজগুলো দেখার সুযোগ পেলো।
সবকিছু শেষ করে শশুড় মশাইয়ের শরীর নিয়ে বাড়ির  উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দুপুর হয়ে গেলো।
হাসপাতালে দু-টো মানুষ এর লড়াই দেখেছিলো প্রত্যুষ সে কয়েকদিন। এক অনন্যার লড়াই আর এক অনন্যার শ্বশুর মশাইয়ের লড়াই।


দু-চার দিন কোনো কথাবার্তা হয়নি অনন্যার সাথে, ইচ্ছে করেই প্রত্যুষ ফোন করেনি।
প্রায় কয়েকদিন পড়ে ফোন আসলো অনন্যার।
কেমন আছেন?
প্রত্যুষ একটু হেসে,"এটা তো আমার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।"
না, আমার খারাপ লাগছে,এতো করলেন  অথচ  খবর নিতে পারিনি, অনন্যা একটু নিচু স্বরে আক্ষেপ করলো।
প্রত্যুষ বুঝলোনা সে কি এমন সাহায্য করেছিল -" তারপর সব ঠিক আছে তো?"
অনন্যা বললো, এই সময় যে ভাবে যায় আর কি। আর আপনি যেমন বলেছিলেন তেমন রাঘবেন্দ্র স্যার কে বলেছি  দুমাস পরে জয়েন করবো।
প্রত্যুষ বেশ জোরের সঙ্গে বললো," স্যার নিশ্চই বুঝবেন।"
অনন্যা একটু হেসে বললো,"হ্যা, হাসপাতালের সময়ও রিসার্চের কাজ সাবমিট করে গেছি। এখনও করে যাচ্ছি।
প্রত্যুষ কোনো উত্তর দিলো-না।"
অনন্যা হয়তো আশা করেছিল প্রত্যুষের কাছে কোনো উত্তর, একটু বিরক্তই হলো "ছাড়ুন। বলছি, প্রত্যুষ দা  আপনার ঠিকানাটা  দিন, শ্রাদ্ধের কার্ড পাঠাবো।
প্রত্যুষ আবারও কোনো উত্তর দিলো-না।

              (৩)


জুলাই মাসে ত্রিপুরা যাবে ঠিক করেছে অনন্যা। রিসার্চ এগিয়েছে ঠিকই কিন্তু জোর করে এক প্রকার।
আর পড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ছাড়া যাবে-না- বাবা, মা, বোনের দায়িত্ব।
বোন এখন বিবাহিতা। সংসার করছে। কিন্তু তবু বট গাছ হয়ে থাকতে হবে ভেবে জোর করে লড়াইটা আনে বুকের মধ্যে অনন্যা।
শুধু নিজের বাড়ী না, অনন্যা সব ছেড়ে দিলে প্রহল্লাদ এর পরিবার ও যে ধসে যাবে।
বই নিয়ে এদিক ওদিক হাটতে হাটতে প্রত্যুষদার কথা মনে পড়লো অনন্যার। প্রত্যুষদা  শ্রাদ্ধে আসেন- নি। অবশ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাওয়ারও ছিলো  অনন্যাদের, তাই এলে প্রত্যুষদাকে একটু একাই থাকতে হতো, তাই না এসে ভালোই করেছিলেন।
তবে, অনেকদিন কোনও খবরও  নেই, ফোন করবে কিনা ভেবে - ফোন করলো অনন্যা।
এতো দিন পড়ে মনে পড়লো অনন্যার? প্রত্যুষ  বললো।
অনন্যা,"কেনো, আপনার মনে পড়েছিলো?"
প্রত্যুষ: "আমি জানতাম একদিন ফোন আসবে"।
অনন্যা:"কি ভাবে?"
প্রত্যুষ: "বলবো একদিন। আগে বলো রিসার্চ কেমন হচ্ছে?"
অনন্যা: "হচ্ছে। পড়তে ইচ্ছে করছিলো না। তাই."
প্রত্যুষ: " আচ্ছা, তাই ফোন করলে। এতো কিছু করছো, নতুনদের সামনে একটি রিসার্চ দিয়ে যাবে এর চাইতে ভালো আর কি হতে পারে?"
অনন্যা একটু বিরক্ত আর একটু একটু তাচ্ছিল্য হাসি রেখে বললো," কিছুই করলাম না, আজকে মনে হয় সবাই সব করলো। আমিই কিচ্ছু করলাম না।" আর কিছু বলতে পারলো-না অনন্যা।
প্রত্যুষ বুঝেছিলো,অনন্যা আর কিছু বলতে পারবেনা। অনন্যা যন্ত্রের মতো কাজ করে যাচ্ছে কেবল।
"কেনো পৃথিবী ছাড়ার ইচ্ছেটা চলে যাচ্ছেনা-তো? আমি কি একা যাবো নাকি?", প্রত্যুষ হা,হা করে হেসে উঠলো।
অনন্যা চুপ করে থাকলো।
"আচ্ছা অনন্যা তোমার কি ভালো লাগে? মানে, যেটা করলে বা দেখলে তার চাইতে বেশি আনন্দ আর কিছু আছে বলে মনে হয়না।"
অনন্যা,ফোনটা একটু শক্ত করে ধরে," নাচ, আমার নাচ খুব ভালো লাগতো,ভরতনাট্যম। বিয়ের আগে শিলিগুড়িতে ভর্তিও হয়েছিলাম, তারপর বিয়ে হয়ে গেলো।"
প্রত্যুষ বুঝলো,অনন্যার মনের অবস্থা,ইচ্ছের কথাগুলো বলার সময় শ্বাস পড়ছিলোনা ওঁর। প্রত্যুষ অনন্যাকে বললো," অনন্যা আমি একটু পরে ফোন করছি।"
অনন্যা, ঠিক আছে,  বলে ফোন রাখলো, যদিও ফোনটা ধরেই ছিলো, একমুহূর্তে অনন্যা চলে গেছিলো সেই নাচের দিনগুলোতে।

কি ভালোবাসতো! পড়ার ফাঁকে-ফাঁকে নাচ দেখতো ইন্টারনেট এ, সুযোগ পেলে টিভি -তে- যখন অনন্যা পুনেতে হোস্টেলে  ছিলো।
এরপর শিলিগুড়িতে ইনস্টিটিউট এর একটা প্রোগ্রামে একটি মেয়েকে নাচতে দেখে সেই মেয়েকে ধরে যুথিকা দির কাছে গিয়েছিলো নাচ শিখতে।
যুথিকা দি অনন্যাকে অন্য ছাত্রীদের সামনে শেখাতো না, আলাদা করে শেখাতো।
যুথিকা দির-ও ভালো লাগতো এতো সুন্দর ভাবে অনন্যা নাচ তুলতো।
উফ! কি দিন ছিলো, ভাবলো অনন্যা। আজকে অনেক বছর পর সেই আনন্দটা অনুভব করছে অনন্যা। 
একটার পর একটা দিন মনে পড়ছে, কতো পরিকল্পনা করেছিলো নাচ নিয়ে।
নাচের চিন্তায়  এতো মত্ত ছিলো যে ফোন এসেছে বুঝেও ইচ্ছে করছিলোনা ফোন ধরতে, একবার দেখলো ফোনটা, ওহ প্রত্যুষদা।
হ্যা বলুন?
সরি, একটা কাজে আটকে গেছিলাম এতক্ষন, প্রত্যুষ দু্ঃখ নিয়ে বললো।
--ঠিক আছে। আপনিও তো ব্যস্ত থাকেন।
--তারপর, আর কি ভালো লাগে বললে নাতো?
--ওহ। অনন্যা একটু সময় নিলো। একটা ছোট শ্বাস নিয়ে, রান্না করতে।মানে নতুন কিছু বানাতে দারুন লাগতো।
--ঠিক বুঝেছিলাম, তোমার স্বামীকে দেখে।
--নাহ,এখন আর বানাই না। শেষ কবে বানিয়েছি মনে পড়ে না।
--শুনেই মুখে জল আসছে, কি খাওয়াবে আমাকে  বাদশাহী বিরিয়ানী? একান্তে রান্না করে।
--ছাড়ুন, এখন আর ইচ্ছে করেনা।
--জানো, আমার মাসীর কাছে রান্নার অনেক বই ছিলো, সে একেবারে পরীক্ষার বইয়ের মতো         পড়তো,বলে প্রত্যুষ বেশ জোরে-জোরে চিৎকার করে হেসে উঠলো।
--অনন্যাও হেসে, আমারও পরীক্ষা দেওয়ার মতো কিছু বই ছিলো। অবশ্য এখন তো আর বইয়ের দরকার হয়না এখন ইউ টিউব এ খুঁজলেই হাজার-টা উপকরণ চলে আসবে।
--তা ঠিক, তবে বই হাতে বানাচ্ছে কাউকে দেখা একপ্রকার চোখ  তৃপ্তি ব্যাপার হয়- আর চোখ  তৃপ্তি থেকে...........
অনন্যা উত্তর দিলো না,ফোন কিছুক্ষন  সেরকম ভাবেই ধরে  থাকলো। অনন্যা প্রত্যুষের "একান্তে" কথাটা " চোখ তৃপ্তি'র কথা  কিভাবে নেবে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলো।
অনন্যা চুপ করে আছে দেখে  কিছু সেকেন্ড অপেক্ষা করে প্রত্যুষ আবার বললো,"একটা কথা বলবো?"

পৃথিবীর সবচেয়ে কৌতূহলী কোনো কথা যদি থাকে তবে তা হলো - কিছু বলার অধিকার পাওয়ার আর্জি। অনেকরকম স্রোত শরীরের মধ্যে দিয়ে চলে যায় কেউ যদি এমন একটি আর্জি রাখে। একজনকে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ করে দিতে পারে এই উক্তিটি। ঠিক সেরকম অনন্যা বুঝে উঠতে চাইছে হঠাৎ কি বলতে চায় প্রত্যুষদা?
বলুন, অনন্যা প্রত্যুষদাকে বলতে সুযোগ দিলো। 
--আজকে দারুন দিন,আমি জানি ইসলামপুরেও বৃষ্টি  হচ্ছে। আজকে একটা নতুন রান্না বানাতেই হবে। 
আচ্ছা আমি একটা কাজ সেরেই ফোন করছি। নতুন খাবার বানানোর দাবি  রেখেই ফোন রেখে দিলো প্রত্যুষ।


প্রত্যুষের দাবি তে একটু যেন বাড়াবাড়ি ছিল. অনন্যার বিরক্ত লাগলো। এমনিতেও মন ভালো-না। বাড়ীর অবস্থা ভালো-না,মাত্র দু-মাস হলো শশুর মশাই পৃথিবী ছেড়েছেন। লোক বলতে বাড়ীতে অনন্যার স্বামী আর শাশুড়ী মা'।
পাশেই আত্মীয় স্বজন অনেক রয়েছে তবে আজকের দিনে সবাই ব্যস্ত, তাই বাড়ীটা আরও কেমন যেন  হয়ে যায় সন্ধ্যে থেকে। 
অনন্যা একবার ঘড়িটা দেখলো-সন্ধ্যে ছয়টা বাজে। প্রহল্লাদ  অন্য দিন ক্লাব হয়ে বাড়ি আসে, আজকে সোজা কলেজ থেকে চলে এসেছে।
অনন্যার মনে হলো দুপুর থেকে আর নিচেই নামেনি সে। দোতালার ঘরেই নিজের শোবার ঘর আর পাশের ঘরে পড়াশুনা করে, আজকে একবারও নামেনি নিচে,এদিকে যে পড়েছে তাও-না, খালি এ-ঘর আর ও-ঘর করে কেটে গেছে।
মাঝে দু-বার কাজের মেয়ে,শান্তি চা-দিয়ে গেছিলো। শান্তির মুখেই সাড়ে পাঁচটায় শুনেছে দাদা এসেছেন। আর শাশুড়ী মা'য়ের যা কিছু  প্রয়োজন তা- শান্তিকে নির্দেশ দিয়ে দিয়ে করিয়ে নিয়েছিলো।
প্রত্যুষের অনধিকার রাখা দাবিতে ভীষণ রাগ হলো অনন্যার তাই ব্যাপারটা ভালো না লাগায় নিচে নামলো। 


শান্তি মূলত রান্না করে চার বেলার, তাই আরও একজন আসে কাজের জন্যে, নাম প্রমীলা।
কাজেই ঘরে খুব কাজ থাকবেনা জানতো অনন্যা। শাশুড়ী মা' শুয়ে ছিলেন। সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা, তবু শুয়ে আছেন। করবেটাই বা কি? আর মনের অবস্থাও ভালো না। শুয়ে-শুয়ে শশুড় মশাইয়ের কথা ভাবছেন হয়তো।
চারটে ঘর নিচে, একটি শশুড় মশাই আর শাশুড়ী মা'য়ের শোবার ঘর, একটি প্রহল্লাদের  স্টাডি রুম, আর একটি ঘরে শশুড় মশাই বসতেন, যে ঘরটি সম্পূর্ণ আদালত ছিলো, শশুড় মশাই বড় আইনজীবী লোক ছিলেন, আইনের পড়াশুনায় এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে বাড়ীর কোনো কিছুই উনার জানার মধ্যে ছিলো না বললেই চলে। বেশির ভাগ সময়েই লোকজন এসেই থাকতো।
অনন্যা সেই ঘরের দিকে একবার তাকালো তারপর প্রহল্লাদের যে ঘরে পড়াশুনা করে সে ঘরে  গেলো। প্রহল্লাদ কিছু একটা পড়ায় বেশ মগ্ন ছিল, অনন্যার দিকে মাত্র একবার দেখে হাসলো।
অনন্যা,মাঝখানের বসার ঘরে এসে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।

ভালো করে দেখলো ঘরটা, আগেও চেহারা এর থেকে খুব বেশি আলাদা থাকতো না। অনন্যা একবার মেলালো আগের বাড়ী আর শশুড় মশাই চলে যাওয়ার পরে বাড়ি- কি এমন বদলেছে আজকের সাথে? 
শান্তি  আজকে যেমন রান্না করছে তেমনই করতো আগেও। শাশুড়ী মা' আগে কেবল কখনো রান্না ঘরে কখনো নিজের ঘরে থাকতেন। প্রহল্লাদ  যখনই বাড়িতে আসুক রাত দশটায় খেতে বসার আগে একটা কথা বলার মতো অবস্থায় পাওয়া যেতোনা। 
আর শান্তি চা-নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করতো এ-ঘর আর ও-ঘর। 
ভেবে খুব হাসি পেলো অনন্যার। কিন্তু আজকেও একই রকম আছে বাড়ির চরিত্র!

আসলে শশুড় মশাই মারা গেছেন সেটা দুঃখের কিন্তু ওনার উপস্থিতি বা বাড়ীর আর কারও উপস্থিতি আজকের দিনের থেকে আলাদা করে দিতো না।
কাজেই এখন খারাপ লাগছে কি কারণে সেটা ঠিক জানেনা অনন্যা।  প্রহল্লাদ  ভীষণ প্রেক্টিক্যাল। আর শশুর মশাইয়ের বয়স আটাত্তর হয়ে গিয়েছিলো তাই মানসিক ভাবেও প্রহল্লাদ  অনেটাই তৈরী ছিলো। শাশুড়ী মা' আগের থেকে একটু ভালো।
এ বাড়িতে মানসিক স্তর আগাগোড়াই অনেক আলাদা-
অনন্যা সোফায় বসে চা খেতে খেতে এসব ভেবে যাচ্ছিলো। শান্তি চা দিয়ে গিয়েছিলো।
ভাবতে ভাবতে অনন্যার মনের অবস্থার একটা পরিবর্তন অনুভব করলো।
ভেতর থেকে কেমন যেনো রান্না ঘরে যাওয়ার একটা ইচ্ছে জাগছিলো।
একবার দেখলো সাতটা বাজে।
হটাৎ সফা থেকে উঠে পড়লো অনন্যা। 
"এই শান্তি,কি বানাচ্ছিস রে?", শান্তি কি উত্তর দিলো কানেও আসেনি অনন্যার, সোজা রান্না ঘরেই চলে গেলো।


একটা রান্না করার আনন্দ চেপে বসছে অনন্যার ঘাড়ে।
"এই,শান্তি- জিরে,হলুদ এর কৌটো কোথায় রেখেছিস রে?"
শান্তি একটু আড়চোখে দেখে নিয়ে হেসে বলল,-"দিদি,তুমি কি রান্না করবে নাকি?"
"কেনো আমি কি রান্না কখনোই করিনি নাকি?",অনন্যা রান্নাঘরের অবস্থাটা দেখতে দেখতেই বললো শান্তিকে।
শান্তি হলুদ, জিরে আরও কিছু কিছু দেখিয়ে দিলো।
অনন্যা বললো,"দাড়া, রান্না তুই যেমন করছিস কর আমি একটা স্পেশ্যাল ইরানী কোপ্তা বানাই।"
অনন্যা রান্না ঘরে আসায় শান্তিও খুব মজা পেয়েছে। দুজনে দারুন আনন্দ করতে করতে নিজের নিজের রান্না আবারও শুরু করলো।
বয়েস অনন্যা আর শান্তির প্রায় একই হবে, যেহেতু শান্তি কাজ করে তাই সন্মান দেখিয়ে থাকে।
ইরানী কোপ্তা একবার বহূকাল আগে অনন্যা বানিয়েছিলো, তাও ইউ টিউব খুলে নিয়েছে।
রান্নার মধ্যেই একটা শিল্প আছে, জে  এই মজাটা  পায় তাঁর দারুন একটা সৃষ্টির আনন্দ হয়।
এই মুহূর্তে নন ভেজ  অনন্যা এমনিতেও বানাতো না। বাড়ীর সিচুয়েশন টাও যাতে বজায় থাকে আবার রান্নার আনন্দও পাওয়া যায় সেরকমই একটা রান্না বেছে নিয়েছে অনন্যা।
"এই,শান্তি,যা তো, মা' আর দাদাকে, চা একটু দিয়ে আয়।" রান্নার ওভেন  বড়ো হওয়ায় অনেক কিছু একসাথে করে নেওয়া যায়, সেই সুযোগে সবার জন্যই একটু চা বানিয়ে ফেলেছে অনন্যা।
শান্তি- ট্রে- তে দু-কাপ চা নিয়ে বেরিয়ে গেলে অনন্যা বেশ জায়গা নিয়ে রান্নায় হাত দিলো।
শান্তি এই মুহূর্তে ডাল বানাচ্ছিলো, সেটাতেও হাত দিলো এক দু বার।


রান্না করতে করতে প্রত্যুষদার কথা মাথায় এলো অনন্যার। রাগটা একটু পড়েছে। 
জুলাই মাস বৃষ্টি হতেই পারে,তাই দায়িত্ব নিয়ে ইসলামপুরে  বৃষ্টি হচ্ছে বলেছিলেন, এমন ভাবে বলেছিলেন যেনো একেবারে দেখতে পাচ্ছেন। 
ভেবে হাসি পেলো অনন্যার।
প্রত্যুষদাকে ভাবতে ভাবতে বেশ ভালো লাগলো অনন্যার। নাচের স্টাডি গুলোও রাতে খাওয়ার পর দেখবে ঠিক করেই ফেলেছে। অনেকদিন পরে একটা জেদ পাচ্ছে মনের ভেতরে অনন্যা।
কিছুক্ষন অন্যমনস্ক হয়েছিলো মনে হয় কারণ শান্তি পাশে চলে এসেছে আর পেছনে প্রহল্লাদ দাঁড়িয়ে  আছে বুঝতেই পারেনি," আরে তুমি কখন এসেছো?" খুন্তি হাতেই জিজ্ঞেস করলো অনন্যা। "চা খেয়েই বুঝেছিলাম। এ চা শান্তি বানায়নি। তাই দেখতে আসলাম। কি বানাচ্ছ?" প্রহল্লাদ বেশ আনন্দ নিয়ে বললো অনন্যাকে।
দাদা র কথায়  শান্তি মুখ টিপে হাসছিলো। সেদিকে দেখে অনন্যা বললো,"যেনো শোনেনি কি বানাচ্ছি?"
"দাঁড়াও-দাঁড়াও আঁচ টাকে একটু কম করে পাকাও তাহলে জমবে",প্রহল্লাদ শুধু  বললো-না,আঁচটা কে একটু কমিয়েও  দিলো।
এতক্ষনে ব্যাপারটা আরও জমে গেলো, প্রহল্লাদ ও যোগ  দিলো রান্নাঘরে। 
বেশ উত্তেজনায় জমে  উঠলো রান্নাপর্ব।
চিৎকারের  কারণ শাশুড়ী মা'ও এসে দেখে গেলো দু বার।

                             (৪)


গতোকাল রাত এর কথা ভোলা যাবে না অনেকদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেনো একই বাড়ী অন্যরকম মনে হচ্ছিলো অনন্যার কাছে। 
প্রহল্লাদ  সকাল আটটায় বেরিয়ে গেছে কলেজে।
শাশুড়ী মা'কেও দেখভাল করে নিয়েছে, এখন উনিপুজোর  ঘরে।
শান্তি আর প্রমীলা কে ইন্সট্রাকশন  দিয়ে দিয়েছে।
কোনো কিছুতেই অনন্যার আর অসুবিধে কিছু মনে হচ্ছেনা। একটা ফুড়ফুড়ে ভাব আছে মনের মধ্যে।
গতোকাল রাতে খেতে বসে অনেক গল্প হয়েছে প্রহল্লাদের সাথে।
তারপর প্রায় একটা-দেড়টা পর্যন্ত নাচ যা একসময়ে  শিখেছিলো সেগুলো নাড়াচাড়া করেছে। ইউ টিউব এ অনেক নাচের মুদ্রা লক্ষ করেছে।
একটা ভালো রাত ছিলো-কালকের রাত। একটা রাত যেন অনেক বাতাস দিয়ে গেছে অনন্যাকে।
রিসার্চ এর পেপার ওয়ার্ক মনে মনেই অনেকটা ভেবে নিয়েছে। আজকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে রিসার্চ ওয়ার্ক  অনন্যা, সেরকম বদ্ধপরিকর হয়েই বসবে পড়তে।
প্রহল্লাদ নেই, বাড়ির বাকি কাজ পড়ার সাথে-সাথে- সামলে নিতে পারবে ভালো করেই অনন্যা জানে।


সময়কে বোঝা খুব মুশকিল। যখন ভালো লাগেনা তখন এক একটা মিনিট এক একটা ঘন্টার মতো মনে হয়। আর যখন ভালো লাগে তখন কিছুতেই সময়কে ধরে রাখা যায়না।
অনন্যারও তাই হয়েছে। কখন যে সময় পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলো বোঝাই যায়নি।
আগের থেকে অনেক বেশি কাজ করছে অনন্যা, মাঝখানে রিসার্চ ওয়ার্ক  বেশি করছিলো-না, এখন অনেক পড়া শুরু করেছে, সব দিকেই বেশি করে খেয়াল রাখছে, বলতে গেলে খেয়াল রাখতে পারছে কারণ মন ভালো থাকছে আজকাল।

ঘড়ির দিকে তাকালো অনন্যা, সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। আজকে প্রহল্লাদ বাড়ী আসবে-তো? অনন্যা এখন নিচেই আছে।
আজকেও অনন্যা এক দুটো রান্না করবে শান্তিকে বলে রেখেছে। শান্তি বিকেল চারটেতে চলে আসে আর রাতের রান্না শেষ করে যায়।
বিকেলে কিছু বানায় আর যেহেতু বাড়ির সবাই ফ্রেশ খেতে পছন্দ করে তাই রাতে নতুন করে সব রান্না হয়।
অনন্যা ফোন টা নিলো প্রহল্লাদ কে করবে  বলে।

                      (৫)


সময়কে বোঝা সত্যি যায়না।
একটা ঝড়ের মুহূর্ত এসেছিলো কয়েকদিন আগে যখন আবার নাচ উঠেছিলো শরীরে।
মাত্র কিছুদিনে আসতে আসতে কেমন ভাবে যেনো নাচ নেমে গেলো শরীর ছেড়ে।
এতো আনন্দ কোথা  থেকে এসেছিলো? কেনো এসেছিলো? এতো আনন্দকে অনন্যার ভয় লাগে।
যেদিন আবার রান্না শুরু করেছিল আর নাচ তুলেছিলো তারপর দুমাস  কেটে গেছে  কিন্তু এই দুমাস   অনন্যার কাছে যেন মাত্র দুটো দিন।
যেনো এই সেদিন  মুহূর্তটা এসেছিলো।

হঠাৎ  অস্থিরতা  ঘিড়ে ধরছে অনন্যাকে। জুলাই মাসে ত্রিপুরা যাওয়ার ছিল- স্যারকে অবস্থা বুঝিয়ে বাড়ি থেকেই পেপার ওয়ার্ক করেছে। এবার একটা ভয় মনের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে- যাওয়া উচিত এন -আই-টি-তে, ভেতর থেকে বলছে। 
মে মাসে এসেছিলো যখন শশুর মশাই অসুস্থ হয়েছিলো আর আজকে  সেপ্টেম্বর শেষ হতে চললো, এদিকে এলোমেলো হয়ে পড়েছে সব।
প্রহল্লাদ কখনোই  বাড়ীর কিছু দেখেনি। শশুর-মশাইও দেখতেন না। আগে দায়িত্ব ছিল শ্বাশুড়ি মায়ের ওপরে এখন সেটা এসেছে  অনন্যার ওপরে।
শশুর-বাড়ি, আতত্মীয়স্বজন, সব  সামলাতে নাজেহাল তার ওপর অনন্যার কাছে সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব নিজের বাবা, মা।
বাবা র শরীর ভালো না। বাবা কোনো কথা শুনতে চায় না। রাগ উঠে যায় অনন্যার।
বোনকে নিয়ে এই মুহূর্তে সেরকম চিন্তা না থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত রাখাটা দরকার।
এতগুলো চিন্তা নিয়ে আর পারছেনা টানতে।
যে প্রদীপ জ্বলেছিল, আসতে আসতে নিভে যাচ্ছে যেনো। 
তারমধ্যে ত্রিপুরা যাওয়া টা অনন্যার কাছে ভয়ের মনে হচ্ছে। সে তাগিদ আসছেনা।

কয়েক দিন থেকে বইপত্রের দিকে তাঁকালেও  কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে। 
শান্তি,চা রেখে গেলো টেবিল এ। অনন্যা তাকালো না দেখে বলে গেলো,"দিদি, চা।"
অনন্যা এবার তাকালো। কয়েক দিন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না অনন্যার। 
আজকে রবিবার, জানে প্রহল্লাদ  বাড়িতেই আছে তাও নিচে নামতে ইচ্ছে করছেনা।
একটা এনার্জি এসেছিলো কিন্তু হঠাৎ করে চলে যাচ্ছে। বরঙ কোথা থেকে যেনো একটা ভয় পেয়ে বসছে অনন্যার ওপর। ঠিক বুঝতে পারছেনা।
প্রহল্লাদ  পড়ছে নিশ্চই।
রিসার্চটা নিয়েও একটা ভয় হচ্ছে। একদম গতি পাচ্ছেনা। স্যার বোধ হয় খুব রেগে আছে। আগে এতো এতো কাজ দিতেন স্যার, হঠাৎ কেমন যেন  সরে যাচ্ছে সব কিছু।
কি করবে মাথায় আসছেনা অনন্যার। শোবার ঘরেই আছে, পড়ার ঘরে যেতেই ইচ্ছে করে না।

সকাল বেলা। রবিবার। প্রত্যুষদাকে খুব মনে পড়ছে কেনো? অনন্যা বুঝতে পারছে-না।
সেই শেষ কথা হয়েছিলো অনন্যা মনে করলো যেদিন একটা ডিশ বানাতেই হবে বলেছিলন।
অনন্যা সেদিন রেগে গেছিলো। আজকে খুব মনে পড়ছে।
ফোন করবে একবার? কিন্তু প্রত্যুষদাও তো এর মধ্যে আর ফোন করেন-নি। 
ভালো দেখাবে ফোন করা? ফেসবুক এ পরিচয় মাত্র, কতটাই চেনে?
এতো ভাবতে আর ভালো লাগছিলো না অনন্যার তাই খাটে বসে প্রত্যুষদাকে ফোন করেই বসলো।


"আমি জানতাম তুমি ফোন করবে অনন্যা।" প্রত্যুষ ফোন ধরে একটু হাসলো।
"কিভাবে জানতেন?"
অনন্যাকে উত্তর কিছু দিলো-না প্রত্যুষ।

অনন্যা: আমাকেও তো মনে পড়েনি আপনার।
প্রত্যুষ: যারা পৃথিবী ছাড়তে চায় তাঁদের কাছে আর কি পাওয়ার আছে? তবে জানতাম ফোন করবে।
অনন্যা: কি ভাবে?
অনন্যার অবাক হওয়া প্রশ্নের উত্তর প্রত্যুষ দিলো না,"কেমন আছো বলো? আর ত্রিপুরারর খবর কি?"
অনন্যা একটু সময় নিয়ে বললো,"আমি এন -আই -টি- তে যায়নি তো এখনো।"
--কেনো?
এতো কাজ পড়ে আছে। আর জানিনা কেনো যাচ্ছিনা? অনন্যা একটু রাগ নিয়েই বললো প্রত্যুষকে।
প্রত্যুষ এই প্রথম রেগে গেলো," আসলে অনন্যা তুমি বাড়ি থেকে রিসার্চ করাটাকে টেকেন ফর গ্র্যান্ট ধরে নিয়েছো। তুমি মজা করছো সিস্টেমের  অথবা সুবিধে নিচ্ছ।
"আপনি এ ভাবে আমাকে বলতে পারেন না- প্রত্যুষ দা।" অনন্যাকে এতো রাগতে আগে হয়তো কেউ দেখেনি।
প্রত্যুষ স্বর হালকা করলো," সরি, তবে এটুকু বলতে পারি, এভাবে তোমার রিসার্চ কমপ্লিট হবে-না।" "অবশ্য তুমি যে পরিবারের বউ, তাতে পি-এইচ-ডি -করবার প্রয়োজন নেই, আর তুমি এখন তাই চাও। অন্যের ওপর নির্ভর করে জীবন কাটিয়ে দেবে। ভালো।" প্রত্যুষ যোগ করলো।
"আপনি কে বলুন তো আমাকে এ ভাবে বলছেন?"

প্রত্যুষ এবারে একটু ভালো করে ধরলো ফোনটা।
--অনন্যা, তোমার প্রবলেম কি জানো?
প্রবলেম ? অনন্যা কোনো উত্তর দিলো-না।
প্রত্যুষ, একটু হেসে," রাগ হয় যদি অন্য কেউ নিজের সম্পর্কে প্রবলেম  শব্দটা নেয়। কেনো জানো? 
কারণ আমরা নিজেরা জানিনা আমাদের প্রবলেম টা কোথায়, তাই আমরা রাগ করি।"

"অনন্যা, তুমি কতগুলো চরিত্র-কে  তোমার জীবনের ডেসটিনি  মনে করো। তুমি মনে করো তুমি এসেছো পৃথিবীতে কতগুলো মানুষকে খুশি করতে। তাই তোমার জীবনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য কতগুলো মানুষ।
কখনও ভেবেছো তুমি ভালো নাচ করো কেনো? 
ভেবেছো রান্না করে তোমার মধ্যে কে-কি পায়, যে এতো খুশি হয়ে ওঠো?
কখনও ভেবেছো রিসার্চ এ সুযোগ কেন পেয়েছো?
ভাবোনি।
কারণ তোমার কাছে কতগুলো মানুষ হচ্ছে পৃথিবী।
নাচের ঝড় তুলে পৃথিবীকে শান্ত করা বা শান্তি দেওয়াটা  একজনের কি জীবনের কারন  হতে পারেনা?
রিসার্চ করে নতুন কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা উদ্দেশ্য  হতে পারে না?"
     
প্রত্যুষ একটু চুপ হলো।

অনন্যা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে,"আর বাবা, মা,স্বামী, পরিবার-লোক-কিছুনা?"
--অনন্যা, এরা কেউ তোমাকে স্বেচ্ছায় নেয়নি।
--অনন্যা একটু হাসলো," বলছো বাবা, মা'ও না?"
--তুমি অবাক হবে যে তোমার জন্মের ২মিনিট আগেও তাঁরা জানতেনও না যে তুমি আসছো।
তাঁরা বলেছেন,"যেই আসুক আমরা খুশি"। আসলে যেই আসুক অর্ধেক জীবন আমরা দেখবো আর অর্ধেক "ও" দেখবে। 
কি জানো এই সত্যি টা মানতে আমরা চাইনা, ঠিক যেমন একদিন মৃত্যু হবে মানতে চাইনা।
--আর স্বামী? সে-তো স্বেচ্ছায় এসেছিলো আমার জীবনে ।
--অনন্যা, এতো পরকীয়া তাহলে হতো-না। এক-ঘন্টায় মানুষ চেনা যায়না। দুজন দেখে দুজনের দায়িত্ব নিতে পারবে কিনা?
অনন্যা একটু চুপ করে," যাঁরা ভালোবেসে বিয়ে করে?"
প্রত্যুষ একটু বিরক্ত হয়ে বললো,"আমরা নিজে-কে জানিনা আর আর একজনকে ভালোবাসা?"

"অনন্যা তুমি দায়িত্ব, ভালোবাসা, উদ্দেশ্য , সব কিছুর মধ্যে এলোমেলো করে ফেলেছো।
তুমি যেটাকে একমাত্র উদ্দেশ্য ভাবছো, লক্ষ্য ভাবছো  সে-টা- অনেক দায়িত্বর মধ্যে এক একটা দায়িত্ব।"

"তোমার স্বামী প্রহল্লাদ  নিজের প্রয়োজনে তোমার জীবনে এসেছিলেন, তোমাকে কিছু দেবেন আর তোমার থেকে কিছু নেবেন। তোমাকে যা দেবেন  ভেবেছিলেন তা তিনি দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন।
তুমি তাঁর ওপর রাগ করতে পারোনা কারণ কতগুলো অধিকার একে -অপরের প্রতি  থাকবে  সেই চুক্তি বিয়ে করার সময় না বলেও তোমাদের মধ্যে হয়েছিলো, ভেবে দেখো যতটুকু আশা করা যায়, উনি কি সেটা দেননি?"

"আর দায়িত্ব  হলো তুমি তোমার মধ্যে যা আছে তা দিয়ে তোমার পরিবার, তোমার লোক আর সব মানুষকে ভালো করে দিয়ে যেতে পারো বা আনন্দ দিয়ে যেতে পারো....... সেটা হচ্ছে তোমার দায়িত্ব।"

"তুমি না থাকলেও তোমার দায়িত্ব গুলো আটকে যাবে না, কেউ না কেউ নেবে। 
কিন্তু তোমার ডেসটিনি হারিয়ে যাবে সেটা কেউ নেবে না। তোমার উদ্দেশ্য  হারিয়ে যাবে।"

"অনন্যা,মন আর মাথা কি বলছে শুনলে আমরা হেরে যাবো। আমরা কি বলছি সেই মতো মন আর মাথাকে চলতে দাও।"


অনন্যা: " আপনি ত্রিপুরা যেতে বলছেন?"
প্রত্যুষ: "কখনও ভেবেছো এতো মাস তোমার স্যার কিভাবে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আছেন?
বুঝিয়ে বলো। উনি তোমাকে সাহায্য করতে চান।"
অনন্যা কিছু বলতে যাচ্ছিলো। অনন্যাকে বলতে না দিয়ে প্রত্যুষ বললো, রাখি অনন্যা,একটা কাজ সেরে ফোন করছি।
প্রত্যুষ রেখে দিলো ফোন।

                  ( ৬)


প্রত্যুষদা, সত্যি এলোমেলো করে দিয়েছিলো অনন্যার জীবন।
এক দিন প্রত্যুষ দা বলেছিলো বলে অনন্যা এন-আই -টি তে স্যার রাঘবেন্দ্র মজুমদার কে ফোন করে দু মাস আরো বাড়ি থেকে কাজে করবার দাবি জানিয়েছিল। স্যার সেই সুবিধে না দিলে অনন্যার পক্ষে সত্যি অসুবিধে হতো।
আবার একদিন সেই প্রত্যুষ দা একপ্রকার অপমান করেছিল অনন্যাকে ত্রিপুরা না যাওয়ার জন্যে।- সেদিন অনন্যা র মনে হয়েছিল বাইরের একটি মানুষ অনন্যাকে এতো বড় অপমান কিভাবে করতে পারে?
অপমানিত অনন্যা এক প্রকার জেদ করেই ত্রিপুরা গিয়েছিলো।
আজকে অনন্যা প্রত্যুষদার কথা-গুলোকে পাত্তা দিতে চায়না , কিন্তু কথাগুলো কেনো যে মাথা থেকে বের হচ্ছেনা। দু বছর হয়ে গেছে সব কথার। এত সত্ত্বেও আজকেও সবগুলো প্রত্যুষদা-র বলে রাখা কথাই কেন যেন সারাদিন ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায়।
কিছু কথা আজকেও মনে হয় ভুল-
মা, বাবা, স্বামী- সম্পর্কে, কি বলেছিলেন -"এসব দায়িত্ব।" 

যদি তাই হবে তাহলে...... না, ভুল হয়েছে  ওনার কোথাও। অবশ্য প্রত্যুষ  ডেসটিনি কে পেতে উদ্দেশ্য  পূরণের মধ্যে দিয়ে সব দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন।
আমার ডেসটিনি কি এটাই যেটা আজকে আমি ?  উদ্দেশ্য  কি পেয়েছি?
প্রত্যুষের ওপর যতই রাগ করুক অনন্যা, একটা কথা ঠিক বলেছিলেন,- এন -আই -টি- স্যার এর প্রসঙ্গে। বলেছিলেন,"স্যার সাহায্য করতে চায়", অনন্যা যেদিন কেঁদে স্যারকে যাওয়ার অসুবিধে বলেছিলো, স্যার খুশি হয়েছিলেন। স্যার বলেছিলেন,"আমাকে খুলে বলে ভালো করেছো।আমি জানি বিবাহিতা একজনের পক্ষে এ সময় আসা  কতো অসুবিধে। তুমি যদি আমার দেওয়া কাজ ঠিক মতো করো তবে আমি নিজ দায়িত্বে তোমাকে বাড়ি থেকে রিসার্চ করার ছাড় দিতে পাড়ি, আর শিলিগুড়িতে কোথায়  মেশিনারিজ এর হেল্প  পাবে আমি সে ব্যবস্থা করে দেবো।"

এটা যে কত বোরো একটা ব্যাপার ছিলো অনন্যার কাছে,- সেটা সেই জানে একমাত্র।
হ্যা, প্রত্যুষদা বলেছিলেন বলেই  অনন্যা সেদিন স্যারকে মুখ ফুটে বলেছিলো, না হলে....,,.।
একটা কথাটাও অনেক কাজে দিয়েছে "মন আর মাথা যেটা বলবে সেটা না, যেটা আমি মন আর মাথা কে বলবো ওরা সেটা করবে", এই কথাটা আমূল বদলে দিয়েছে অনন্যাকে।
এখন মন আর মাথা যখন সায় দেয়না, ইচ্ছে করেনা কোনো কিছু যখন,  অনন্যা তখন  জোর করে মন আর মাথা কে দিয়ে কাজ করায়। অনন্যা  দেখেছে বেশিরভাগ ভালো কাজ করতেই ইচ্ছে করেনা, তাই সব জোর করেই অনন্যা করে থাকে। আর এর ফলে দারুন উপকারও পেয়েছে অনন্যা।

আরও একটা কথা অনন্যাকে ভীষণ হেল্প করেছে সেটা হলো অনন্যার নাচ।
আজকে অনন্যা অনেক বেশি যুক্ত নাচের পৃথিবীতে। নিজে শিখছে আবার শেখাচ্ছেও। ইসলামপুর  শুধু না শিলিগুড়ি এমনকি নাচের জন্যে কলকাতাতেও যেতে হয় অনন্যাকে।

কাজেই প্রত্যুষের ওপরে রাগ থাকলেও  সেই সেপ্টেম্বর  মাসে যদি কথা মতন স্যারকে ফোন করে ত্রিপুরা না যেত তাহলে এসব আর হয়ে উঠতোনা।
অনেক কিছু হয়ে উঠতোনা।
আজকে দু বছরে অনেক কিছু করেছে সে। রিসার্চ ওয়ার্ক সমৃদ্ধ। 
আমেরিকার একটি বিশেষ অর্গানাইজেশন এর সাথে যুক্ত। 
তাঁর ভালো লাগার নাচ আজকে একটা জায়গা পেয়েছে।


আর এ সব কিছু হয়েছে কারণ অনন্যা মন থেকে ভীষণ খুশি থাকতে পেরেছে। আনন্দ দিয়েছে মনকে।
সেই আনন্দ দায়িত্বগুলো নেভাতে কি যে শক্তি দিয়ে গেছে, যে শক্তিতে লোকজন, পরিবার, নিজের ডেসটিনি , নিজের উদ্দেশ্য, একটা সম্পূর্ণতা পেয়েছে।
আরও আরও কাজ বাকি অনন্যার।
এগোতে হবে, থামলে হবেনা।

                            (৭)


নাও এই বইটা পড়ো, কাজে-কর্মে খুব  হেল্প  পাবে। প্রহল্লাদ জন্মদিনে  অনন্যার হাতে একটি বই দিলো। 
রবিবার সকাল। খুব ভালো দিনে তোমার জন্মদিন, হাসলো প্রহল্লাদ।
 বইটা খুলে অনন্যা," প্রত্যুষ সরকার।", অনন্যা একটু জোরেই বলে উঠেছিল।
প্রহল্লাদ, চা হাতে বসে অনন্যার দিকে তাকালো," এমন ভাবে বলছো, তুমি চেনো ওনাকে।"
না- চিনবো কেন? অনন্যা বই হাতে বসলো। হাতে চা নিয়ে পৃষ্ঠা খুললো।
একটি-দুটি.........পরে পড়বে করে করেও বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়ে ফেললো অনন্যা।
মাঝখানের দু-তিনটে আর শেষের পাতা পড়ে, একদম শেষে লেখক পরিচয়ে চোঁখ রাখলো।
লেখক, প্রত্যুষ সরকার, জন্ম শিলিগুড়ি, ইন্ডিয়া তে।
উনি লেখেন চরিত্রের সন্ধানে।
উনি  এক চরিত্র সন্ধানী।

অনন্যা লেখক পরিচয়ে লেখকের ফোন নাম্বার আকস্মিক পেয়ে গিয়েছিলো।
প্রত্যুষদার ফোন আর কোনোদিন আসেনি অনন্যার কাছে। 
ফোন নাম্বার  বদলে গেছে দেখলো অনন্যা, বা হতে পারে এই নাম্বারটাই  টাই আসল আর চরিত্র সন্ধানে নতুন নাম্বার  নিয়ে রাখা হয়।
এ বইতে গল্পের প্রধান চরিত্র যে অনন্যা নিজে তা এই কয়েকটি পৃষ্ঠাই যথেষ্ট ছিলো বোঝাতে। পড়তে পড়তে অনন্যা চিনে ফেলেছিলো লেখক প্রত্যুষ সরকার কে।

অনন্যা বইটা অল্প কোলের ওপরে রেখে মনে-মনে বললো, "আমি যে আজকেও পৃথিবী ছাড়তে চাই প্রত্যুষদা।"

অনন্যা সোফা থেকে উঠলো।
উঠে যাচ্ছ, প্রহল্লাদ  জিজ্ঞেস করলো অনন্যাকে।
অনন্যা উত্তর না দিয়ে উঠে গেলো, মনে মনে শুধু বললো,"প্রত্যুষ সরকার,আমি ফোন করবো না। যতই তুমি জানো আমি ফোন করবো।

"এবার আমি ফোন করবোনা  প্রত্যুষ দা-।" আরো একবার নিজের মনে বললো অনন্যা। 
নিজের ঘরের ব্যালকনিতে দাঁড়ালো অনন্যা। হওয়া আসছিলো ভালো। সামনে তাঁকিয়ে অনন্যা নিজের মনে বলল,"প্রত্যুষ দা, তুমি চরিত্র সন্ধান করতে পারো। আমি কিন্তু নিজেই চরিত্র।"-

"এবার তুমি ফোন করবে প্রত্যুষ-দা।" "আমি জানি।"
--------------------------------------------------------

Address:
-----------
DIBYENDU SARKAR.
C/O- SATYA BHUSAN SARKAR.
"VED BHAWAN", 
SURJA SEN PALLY, SHIVMANDIR..
P.O- KADAMTALA.
DIST- DARJEELING.
SILIGURI.
WEST BENGAL- 734011.
PHONE- 9733300998.
                9593093040.



























Post a Comment

0 Comments