আশার আলো | Bengali short story



কলমে: মধুপর্ণা ব্যানার্জী

খাট থেকে উঠে পাশে রাখা ক্রাচ দুটো নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বসে পড়ে শ্রুতি। দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়তে থাকে। সে বোধহয় আর কোনদিনই হাঁটতে পারবে না। তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন একজন শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা... আজকে নিরাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
মনে পড়ে যায়...

সেদিন ছিল একটা টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের জন্য নৃত্যশিল্পী নির্বাচনের প্রতিযোগিতা। সে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছিল বাবা গাড়ি নিয়ে আসবেন, কিন্তু হঠাৎ করেই বাবার ফোন এলো গাড়িতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

শ্রুতি তখন খুব ঘাবড়ে গিয়ে একটা ক্যাব বুক করে বেরিয়ে পড়ে, গন্তব্যে পৌঁছে ক্যাবটা ছেড়ে দেবার পর খেয়াল করে তার নাচের জন্য আনা সিডি ক্যাবেই রয়ে গেছে। সে তখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে যদি গাড়িটা দেখতে পায়... কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে অন্যদিক থেকে আসা একটি গাড়িতে ধাক্কা লেগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অ্যাক্সিডেন্টে প্রাণ রক্ষা পেলেও, তার ডান হাত আর পায়ে ফ্র্যাকচার হয়... পায়ের অবস্থা বেশ খারাপ। ডাক্তার অবশ্য বলেছেন ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু সবকিছু আবার আগের মতো হতে সময় লাগবে...

বাবা,মা, দাদা সবাই মিলে উৎসাহ দিচ্ছেন। কিন্তু শ্রুতি অনুভব করে সে তার মনোবল হারিয়ে ফেলছে।তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বাড়ির সবাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তার জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্টের ব্যবস্থা করেন।

 সে ফিজিওথেরাপিস্ট এর জন্য অপেক্ষা করছিল, কিছুক্ষণ পর একজন ছোটখাটো চেহারার মহিলা তার ঘরে এসে বললো...

“নমস্কার শ্রুতি, আমি জয়া ,আপনার ফিজিওথেরাপি করাতে এসেছি। আমার ছোটখাটো চেহারা দেখে অনেকেই কনফিডেন্স পায় না।ভাবে এ আবার কি করে আমাকে ঠিক করবে... তবে বিশ্বাস করে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে ঠকবেন না, কথা দিলাম।“

জয়ার কথায় এমন কিছু ছিল... শ্রুতি অনুভব করে তার মধ্যে একটা অদ্ভুত ধরনের উৎসাহ জেগে উঠেছে।সে জয়ার হাত ধরে বলে...

“আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম”

সেই হলো শুরু, তারপর দীর্ঘ ছয়মাস ধরে জয়ার কঠিন পরিশ্রমের ফলে শ্রুতি এখন স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারে, ধীরে ধীরে তার নাচের অভ্যাস শুরু করেছে। তার জীবনে ঘনিয়ে আসা অন্ধকার কেটে আশার আলো জ্বলে উঠেছে।

Post a Comment

0 Comments